১৩ এপ্রিল সোমবার, ঘড়ির কাটায় বেলা ২টা ১০ মিনিট। মহাদেব মূর্তি স্থাপন করা হয়নি। ঢাক-ঢোল-কাঁশি’র বাজনা নেই। নেই দেশ বিদেশের হাজারো ভক্ত-পূণ্যার্থী। ছাড়া হয়নি হাজরা, নেই ভরন নাচ কিম্বা কালিনাচ। দিঘী থেকে তোলা হয়নি চড়ক গাছ। দেশ-বিদেশের সণ্যাসীরা আসেনি, বসেনি মেলার কোন পসরা। শুধু ঘট পূজায় ব্যস্ত একজন পুরোহিত। এই সময়ে ভরা মেলায় যেখানে ভক্ত-পূণ্যার্থীতে মন্দির চত্বর উলুধ্বনিতে সমাগম থাকার কথা। সেখানে মাঠে বিক্ষিপ্তভাবে বসে আছেন কয়েকজন ভক্ত অনুরাগী।
এমনই চিত্র উপমহাদেশের বিখ্যাত চড়ক পূজার। পাবনার চাটমোহর উপজেলার বড়াল নদীর তীরে প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত হয় সার্বজনীন চড়ক পূজা ও সপ্তাহব্যাপী মেলা। এ বছর এক প্রকার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এই উৎসব। সারা পৃথিবী জুড়ে করোনা প্রলয় যখন তছনছ করছে সবকিছু তখন চাটমোহরের সনাতন ধর্মালম্বীরা হাজার বছরের চড়কপূজা বন্ধ করে শুধু ঘট পূজার মাধ্যমে শেষ করা হয়েছে বৃহৎ এই উৎসব। চারিদিকে সুনসান নিরবতা। কয়েক জন ভক্ত-পূণ্যার্থী মহাদেব মন্দিরের বিশাল মাঠে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে বসে আছেন। দেখে মনে হলো তাদের মন ভাল নেই। এছাড়া বন্ধ রয়েছে পূজার অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতাও।
স্থানীয় সত্তরোর্ধ সণ্যাসী ভাদু হলদার জানালেন, আমার জীবনে কোনদিন চড়ক পূজা বন্ধ হতে শুনেনি। দেখিও নাই। করোনা ভাইরাসের কারণে আমরা শুধু ঘট পূজার মাধ্যমে শেষ করছি পূজা। এ বছর ভরন নাচ হয়নি, হাজরাও ছাড়া হয়নি। অনেকের মন খারাপ হলেও আমরা ভগবানের গাছে প্রার্থনা করছি এই ভাইরাস (কোভিট-১৯) থেকে পৃথিবী যেন রক্ষা পায়।
মহাদেব মন্দির কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাজীব কুমার বিশ্বাস রাজু জানান, আমার বাবা-কাকার কাছে শুনেছি বিভিন্ন সময় দেশে অনেক মহামারী হলেও এই পূজা বন্ধ হয়নি। কিন্তু এ বছর করোনা ভাইরাস এর কারণে আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলাম এবছর চড়ক পূজার সকল আনুষ্ঠানিকতা বন্ধ রাখা হবে। এ কারণে মাঙ্গলিক পূজার কার্যক্রম হিসেবে শুধু ঘট পূজা করা হচ্ছে। কিছু ভক্ত পূণ্যার্থীরা তাদের আবেগ ধরে রাখতে না পেরে চড়ক বাড়ী এসেছিল। আমরা তাদের শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে প্রার্থণা করতে বলেছি।
মহাদেব মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক কিংকর সাহা জানান, চৈত্র সংক্রান্তির এক সপ্তাহ আগে ঢাকের তালে ‘পাঠ’ বাড়ী বাড়ী নিয়ে যাবার আনুষ্ঠানিকতা থাকলেও তা এবছর বন্ধ রাখা হয়েছে। চড়ক গাছ তোলা হয়নি এবং চড়ক গাছের পূজাও (দই, দুধ, কলা, তেল, ডাবের পানি, ঘিসহ অন্যান্য সামগ্রী দিয়ে পূজা করা) হয়নি। অনেক পূর্ণ্যার্থীর মাঝে মনোকষ্ট থাকলেও আমরা তাদের প্রতিটি বাড়ীতে বাবা মহাদের নামে পূজা করে দেশবাসীকে করোনার মহাসংকট থেকে মুক্তির জন্য প্রার্থণা করতে বলেছি।
ঘট পূজা পরিচালনাকারী মূল পুরোহিত সত্যেন চক্রবর্ত্রী (ভূতে ঠাকুর) জানান, ইংরেজী ১৭২০ সালে একবার ফ্লু আসার কারণে বন্ধ ছিল চড়ক পূজা। এছাড়া ইংরেজী ১৮২০ সালে দেশজুড়ে কলেরা এবং বসন্ত মহামারী আকার ধারণ করলেও সে বছর চড়ক পূজা বন্ধ হয়নি। তিনি আরো জানান, আমরা ঘট পূজার মাধ্যমে তিনদিনের পূজা একদিনেই (১৩ এপ্রিল) শেষ করছি। করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে আমরা ভগবানের কাছে প্রার্থণা করছি।
উল্লেখ্য, প্রতি বছর ১৩ এপ্রিল চলনবিল পাড়ের পাবনার চাটমোহর উপজেলার বোঁথড় গ্রামে বিখ্যাত চড়ক পূজা ও মেলা শুরু হয়। পূজা চলে তিনদিন। আর মেলা বসে সাতদিনের। শুধু এপার বাংলা নয়, ওপার বাংলা থেকেও অনেক ভক্ত অনুসারী আসেন উৎসবে যোগ দিতে। ঐতিহাসিক সভ্যতা নিয়ে কেউ কোন চিন্তা না করলেও এই চড়ক উৎসব অবিভক্ত বাংলার ধর্মপ্রাণ হিন্দুদের মনে বেশ নাড়া দেয়। চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিনে মরা বড়াল নদীর তীরের গ্রামটি হয়ে ওঠে তীর্থ ক্ষেত্রের কেন্দ্র বিন্দুতে।
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ||||||
২ | ৩ | ৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ |
৯ | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ |
১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২ |
২৩ | ২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ |
৩০ | ৩১ |
আইটি সাপোর্ট ও ম্যানেজমেন্টঃ Creators IT Bangladesh