‘ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন জহুরুল ইসলাম (২১) ও মলি খাতুন (১৮)। নিজেদের হাতে সাজিয়েছিলেন একটি সুখের সংসার। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই যেন শেষ হয়ে যায় তাদের সব ভালোবাসা। অতিরিক্ত রোজগারের আশায় ব্যস্ত হয়ে পড়ের স্বামী। আর স্বামীকে না পেয়ে এদিক ওদিক ছুটতে থাকেন স্ত্রী। শুরু হয় দুইজনের মধ্যে অন্তঃর্দ্বন্দ। একপর্যায়ে ক্ষুব্ধ বন্ধুর সহযোগিতায় স্ত্রী মলিকে খুন করে নদীতে ভাসিয়ে দেয় জহুরুল। যে ভালবাসা দিয়ে শুরু তাদের সংসার, সেটা এভাবেই নৃশংস হত্যার মধ্য দিয়ে শেষ হয়।’
২০১৭ সালের ৮ এপ্রিল ঘটনাটি ঘটে পাবনার বেড়া উপজেলার ঢালারচর ইউনিয়নের নারায়নপুর গ্রামে। ঘটনায় মেয়েটির বাবা উপজেলার আমিনপুর থানায় জহুরুলসহ ৯ জনকে আসামী করে অপহরন ও গুমের মামলা করেন। ঘটনার পর গা-ঢাকা দেয় জহুরুল। অজানা থেকে যায় খুনের রহস্য।
ঘটনার দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর পর গত বৃহস্পতিবার (০৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে পাবনার পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেসটিগেশন (পিবিআই) শখিপুর থেকে জহুরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে। জহুরুলের স্বীকারক্তিতে বেরিয়ে আসে হত্যার এইসব কাহিনী।
পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেসটিগেশন (পিবিআই) পাবনা জেলা কার্যালয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. তরিকুল ইসলাম স্ত্রী হত্যাকারী জহুরুলের স্বীকারক্তির বরাত দিয়ে জানান, জহুরুল ও মলির বাড়ি একই গ্রামে। ছেলেটি সিএনজি চালিত অটোরিক্সা চালাতো। ঘটনার বছর খানেক আগে দুইজন দুইজনকে ভালোবেসে বিয়ে করে। বিয়ের পর কিছুদিন তাঁরা সুখেই সংসার করছিল। একপর্যায়ে জহুরুলের টাকার নেশা চাপে।
সে সকালে সিএনজি নিয়ে বের হয়ে অনেক রাতে বাড়ি ফিরতে থাকে। এতে একাকিত্ব বোধ করতে থাকে মলি। সময় কাটাতে সে বন্ধু জুটিয়ে নেয়। এতে ক্ষুব্ধ হয় জহুরুল। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অন্তঃর্দ্বন্দ শুরু হয়। একপর্যায়ে মলি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এতে জহুরুলের ক্ষুব্ধতা বেড়ে যায়। সে আল-আমিন নামে এক বন্ধুর সহযোগিতায় মলিকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
২০১৭ সালের ৮ এপ্রিল দুই বন্ধু শোবার ঘরে বালিশ চাপা দিয়ে মেয়েটিকে হত্যা করে। এরপর নিজের সিএনজি চালিত অটোরিক্সাতে নিয়ে সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর এলাকার একটি ব্রিজ থেকে নদীতে ফেলে দেয়।
এরপর সে প্রমাণ করার চেষ্টা করে যে তার স্ত্রী অন্য কারো সঙ্গে পালিয়েছে। কিন্তু বেশকিছুদিন মেয়েটির কোন খোঁজ না মেলায় ১১ মে মলির বাবা আব্দুর রব বাদী হয়ে জহুরুল ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা মিলে ৯ জনের নামে গুমের মামলা করেন।
এরপরই গা ঢাকা দেয় জহুরুল। সে প্রথমে নোয়াখালি ও পরে শখিপুর গিয়ে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা চালাতে থাকে। মামলার অন্য আসামীরাও জামিনে মুক্তি হয়।
তরিকুল ইসলাম আরও জানান, গত বছরের ৫ মার্চ মামলাটির তদন্তভার পিবিআইকে দেয়া হয়। এরপর থেকেই জহুরুলকে খোঁজা হচ্ছিল। কিন্তু সে এলাকা পরিবর্তনের পাশাপাশি বারবার মুঠোফোনের সিমকার্ড পরিবর্তন করছিল। ফলে ধরা যাচ্ছিল না। একপর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তির সহযোগিতায় তার অবস্থান সনাক্ত করে বৃহম্পতিবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পিবিআই কার্যালয় থেকে শুক্রবার দুপুরে জহুরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ঘটনার পর থেকেই তিনি নিজের ভুল বুঝতে পারেন। এরপর নৌকা ভাড়া করে বেশকিছুদিন নদীতে স্ত্রীর লাশও খুঁজেছেন। কিন্তু লাশটি আর খুঁজে পাননি।
তরিকুল ইসলাম বলেন, অপরাধি যত ধুর্তই হোক এক সময় সে ধরা পড়েই। বিকেলে জহুরুল আদালতে হাজির করা হয়েছে। সে আদালতে স্বীকারক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছে। পরে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। তার বন্ধু আল-আমিন বর্তমানে দেশের বাইরে মালয়েশিয়াতে অবস্থান করছে। তার বিরুদ্ধেও ব্যাবস্থা নেয়া হচ্ছে।
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ||||||
২ | ৩ | ৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ |
৯ | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ |
১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২ |
২৩ | ২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ |
৩০ | ৩১ |
আইটি সাপোর্ট ও ম্যানেজমেন্টঃ Creators IT Bangladesh