ষাটোর্ধ্ব আবদুল প্রামানিক। মাস দুয়েক আগেও ভ্যান চালিয়ে উপার্জন করে একমাত্র ছেলে দুলাল হোসেনের অভাবের সংসারে হাল ধরতেন। সারাদিনের ঘাম ঝড়ানো খাটুনির পর সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে নাতিদের নিয়ে খুঁনসুঁটিতে মেতে থাকতেন।
কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস; মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে দিনরাত এখন পায়ে শেকল ও তালা পরে ঘরে শুয়ে বসে সময় কাটে এই বৃদ্ধের। মুখ থেকে হারিয়ে গেছে হাসি।
এদিকে পাড়া প্রতিবেশী ও স্বজনদের মারধর করায় নিরুপায় হয়ে বৃদ্ধ বাবাকে শেকল বন্দি করে রেখেছেন ছেলে দুলাল হোসেন। পাবনার চাটমোহর উপজেলার গুনাইগাছা মধ্যপাড়া গ্রামে তার বাড়ি।
শুক্রবার দুপুরে সরেজমিন আবদুল প্রামানিকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ভ্যাপসা গরমে টিনের ছাপড়া ঘরের মধ্যে ভাঙ্গাচোরা খাটের ওপর পায়ে শেকল ও তালা পড়া অবস্থায় শুয়ে আছেন আবদুল প্রামানিক।
যে মানুষটি কয়েকমাস আগেও স্বাভাবিক জীবন যাপন করতেন তার এখন এমন অবস্থা দেখে পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছেন ছোট বোন জরিনা খাতুন। তবে মানসিক ভারসাম্য হারালেও এখনও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে ভোলেন না আবদুল প্রামানিক।
ছেলে দুলাল একটি ট্যোবাকো কোম্পানির ভ্যান চালান। যা বেতন পান সেই টাকা দিয়ে স্ত্রী-দুই ছেলেকে নিয়ে সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হয় তাকে। তবুও বাবার এমন অবস্থা দেখে ধারদেনা করে পরপর দুই বার পাবনা মানসিক হাসপাতালে নিয়ে ডাক্তার দেখান।
কিন্তু সুস্থ না হওয়ায় পরিবারে দেখা দিয়েছে হতাশা। বাবার সুচিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই ছেলে দুলাল হোসেনের। তাই আবদুল প্রামানিকের হাতে-পায়ে শেকল দিয়ে তালা বদ্ধ করা হয়। তবে কষ্ট দেখে কয়েকদিন আগে হাতের শেকল খুলে দেয়া হয়।
অশ্রুসিক্ত নয়নে দুলাল হোসেন এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘চার বছর আগে মা মারা যাওয়ার পর বাবা আমার কাছে সবকিছু। ছেলে হয়ে তাকে (আবদুল প্রামানিক) শেকল বন্দি করে রাখতে আমার খুব কষ্ট হয়, কিন্তু আমি নিরুপায়! আমাকেসহ প্রাড়া-প্রতিবেশীদের সবাইকে মারধর করে। আমি গরীব মানুষ, কারও কোন ক্ষতি করলে জরিমানা দেব কিভাবে; যে কারণে বাবাকে শেকল বন্দি করে রেখেছি।’
এ ব্যাপারে গুনাইগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ‘পরিবারটি খুবই অসহায়। আবদুল প্রামানিক নামের ওই ব্যক্তির সুচিকিৎসা প্রয়োজন যা তার ছেলে পক্ষে করা সম্ভব নয়। শেকল বন্দি করে রাখার বিষয়টি জানা নেই।’
তবে বিষয়টি খোঁজ নেবেন বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান।
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | ৪ | ৫ | ৬ | |
৭ | ৮ | ৯ | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ |
১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ |
২১ | ২২ | ২৩ | ২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ |
২৮ | ২৯ | ৩০ | ৩১ |
আইটি সাপোর্ট ও ম্যানেজমেন্টঃ Creators IT Bangladesh
ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্টঃ WebNewsDesign