পাবনার চাটমোহর পৌর শহরের মাছ বাজারে খুব ভোরে আট পৌড়ে শাড়ি পড়া মধ্যবয়স্কা এক নারীর দেখা মেলে প্রতিদিন। কেনেন মাছ, চাল ও দুধ। ছুটে চলেন বাড়ির পানে। এরপর শুরু হয় রান্না। প্রতিদিন সাড়ে ৩ কেজি চাল ও দুই কেজি টাকি বা সিলভার কাপ মাছ রান্না করতে হয় তাকে। রান্না শেষে শুরু হয় খাওয়া-দাওয়া।
খাবারের গন্ধ পেয়ে একে একে ছুটে আসে তার ৪২টি ছেলে-মেয়ে! এমন পরিবারের কথা শুনে সবাই চমকে উঠলেও দীর্ঘদিন ৪২টি বিড়ালকে নিজের সন্তানের মতো লালন-পালন করে আসছেন চাটমোহর পৌরসভার ৪,৫,৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর আলেপা খাতুন।
সকাল হলেই মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নেয়া থেকে শুরু করে নানা কর্মব্যস্ততায় দিনপার করলেও বিড়ালগুলোই যেন তার সবকিছু। পাড়া প্রতিবেশী সহ এলাকার মানুষ তাকে চেনেন ‘বিড়ালের মা আলেপা’।
বর্তমান সমাজে মানুষের মধ্যে যেখানে নিজে ভাল থাকার প্রবণতা বেশি, সেখানে আলেপা খাতুনের পশু প্রেম দেখলে যে কেউ হতবাক হবেন। তবে এখন বিড়ালগুলোর খাবারের জোগান দিতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছেন তিনি। প্রতিমাসে সম্মানী বাবদ যে টাকা পান (১০ হাজার) সেই টাকা দিয়ে পুরো মাস চলেনা; করতে হয় ধারদেনা।
হাত পাততে হয় ছেলে মহরমের কাছে। এনিয়ে ছেলের সাথে মাঝে-মধ্যেই মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। কিন্তু করবেন কি; মায়ার বাঁধনে আবদ্ধ আলেপা খাতুন। স্বামী মারা যাওয়ার পর অনেক কষ্টে ছেলে মহরমকে মানুষ করেছেন।
বাবার বাড়ি থেকে পাওয়া দুই শতক জায়গার ওপর দোচালা টিনের ঘরে ছেলে ও ছেলে বৌকে নিয়ে বাস করেন কাউন্সিলর আলেপা। অন্যান্য জনপ্রতিনিধিরা যখন নিজেদের আঁখের গোছানো নিয়ে ব্যস্ত ঠিক এমন সময় মমতাময়ী আলেপা খাতুন ব্যস্ত তার ৪২টি বিড়াল নিয়ে।
সরেজমিনে আলেপা খাতুনের বাড়িতে গেলে শোনা যায় মধুর ডাক। যেমনটা মায়ের ডাকে সন্তানরা ছুটে আসে, তেমনি আলেপার মধুর ডাকে একের পর এক বিড়ালগুলো ছুটে আসে সাজানো খাবার খেতে।
আলেপা খাতুন বলেন, ‘ভাইরে বিড়ালগুলোকে নিয়ে খুব কষ্টে আছি। সম্মানীর সব টাকা ওদের পেছনে ব্যয় হয়। তাতেও পেরে উঠি না। প্রতিমাসে ধারদেনা করে ওদের (বিড়াল) খাবার কিনতে হয়। আমি খাব কি আর ওদের খাওয়াবো কি? অবলা প্রাণি, ফেলতেও পারিনা। ওরা আমার সন্তানের মতো। ভীষন মায়া লাগে।’
আলেপা খাতুন আরও বলেন, ‘টাকি বা সিলভার কাপ ছাড়া অন্য কোন মাছ খেতে চায়না বিড়ালগুলো। মারামারি লাগলে তাদের শাসন করতে হয়। যদি বকাঝকা করি তাহলে তাদের খুব মন খারাপ হয়। পরে আদর করলেই আবার ঠিক হয়ে যায়।’
বিড়ালগুলোর বসবাসের জন্য একটি ঘর ও খাবার খরচের জন্য সরকারিভাবে কোন সহযোগিতা পেলে কষ্ট দূর হতো বলে জানালেন কাউন্সিলর আলেপা খাতুন।
চাটমোহর সরকারি কলেজের প্রভাষক মনজুর রশীদ বাবু জানান, ‘আলেপা খাতুনের এমন পশুপ্রেম সবাইকে মুগ্ধ করেছে। বিশেষ করে একজন জনপ্রতিনিধি হয়েও নানা কর্মব্যস্ততার মাঝে এতগুলো বিড়ালকে লালন-পালন করা সত্যিই কঠিন কাজ। এমন মানুষ সচারাচর চোখে পড়েনা।’
সহযোগিতার ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরকার অসীম কুমার জানান, ‘এমন পশু প্রেমিক মানুষ আজকাল আর চোখে পড়ে না। আমি অবশ্যই তার (আলেপা) বাড়িতে যাব এবং খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ||||||
২ | ৩ | ৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ |
৯ | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ |
১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২ |
২৩ | ২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ |
৩০ | ৩১ |
আইটি সাপোর্ট ও ম্যানেজমেন্টঃ Creators IT Bangladesh
ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্টঃ WebNewsDesign