প্রায় ৪৫ বছর ধরে গ্রামে গ্রামে ঘুরে চুরি মালা বিক্রি করতেন হতদরিদ্র ফারুক সরদার (৬৩)। বয়সের ভারে আর শারীরিক অসুস্থ্যতায় আয়ের পথ বন্ধ। টাকার অভাবে বিয়ে দিতে না পারায় ঘরে রয়েছে অবিবাহিত বড় দুই মেয়ে। ছোট মেয়েকে বিয়ে দিলেও দুই কন্যা সন্তান হওয়ার পর তাকে তাড়িয়ে দিয়েছে স্বামী। বাবা সংসারে বোঝা হয়ে বেড়েছে সদস্য সংখ্যা।
অপরদিকে, একমাত্র ছেলে জাফর সরদার (৩২) কাজ করতেন দর্জির দোকানে। তার আয়ে টেনেটুনে চলছিল সংসার। বড় দুই বোনকে বিয়ে দিতে না পারায় এই বয়সে নিজেও বিয়ে করেননি তিনি। নানা দুশ্চিন্তায় বছর খানেক আগে মানসিক সমস্যা দেখা দেয় জাফরের। এখন তিনিও অসুস্থ্য হয়ে বাড়িতে বসে আছেন। এমন পরিস্থিতিতে বাবা-সন্তানের আয় রোজগারের পথ বন্ধ থাকায় এক বেলা খেয়ে আর আরেক বেলা না খেয়ে চলছে আট সদস্যের সংসার। বন্ধ হয়ে গেছে তাদের চিকিৎসাও।
পাবনার চাটমোহর উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামের বৃদ্ধ ফারুক সরদারের সংসারের বর্তমান চিত্র এমনই। সম্প্রতি সরকারের ত্রাণ সহায়তা হিসেবে একবার দশ কেজি চাল পেলেও সেটা ফুরিয়েছে ১৫ দিন আগে। কিন্তু তারপর থেকে কিভাবে চলছে তাদের সংসার তা নিজেরাই জানেন না।
আলাপকালে ফারুক সরদার বলেন, এই বয়সে আর কি করবো। ৪৫-৫০ বছর ধরে গ্রামে ঘুরে চুরি মালা বিক্রি করছি পায়ে হেঁটে। এখন আর পারি না। শরীরে কুলায় না। ৫ বছর ধরে হার্টের সদস্যা, হাইপ্রেসার। এখন হার্নিয়া রোগে ভুগতেছি। বড় বড় ডাক্তার দেখাইছি, কিছু ওষুধ খাইছি, কিন্তু ভাল হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এখন টেকা নাই, ওষুধ খাওয়াও বন্ধ। বসে বসে মৃত্যুর দিন গুনতিছি। কেউ একটু সাহায্য করলি খাওয়া হয়। না হলি না খায়া থাকা লাগে।
রোববার (২৬ এপ্রিল) বিকেলে ওই বাড়িতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙাচোরা রান্নাঘরে রুটি ভাজছেন ফারুক সরদারের স্ত্রী সাজেদা খাতুন (৫৩)। ঘরের বারান্দায় চৌকির উপর বসে অসুস্থ্য ফারুক সরদার ও তার ছেলে জাফর সরদার। বিমর্ষ হয়ে বসে আছেন বড় মেয়ে কুলছুন খাতুন (৩৫) ও নার্গিস খাতুন (৩৪)। বাড়ির পাশেই খেলাধুলায় মগ্ন দুই নাতনী। তাদের সামলাতে ব্যস্ত ছোট মেয়ে খাইরুন পারভীন (৩০)।
জানা গেল, স্ত্রী, তিন মেয়ে, এক ছেলে ও দুই নাতনী নিয়ে ফারুক সরদারের সংসার। এর মধ্যে বড় দুই মেয়ে কুলছুন খাতুন ও নার্গিস খাতুনকে টাকার অভাবে বিয়ে দিতে পারেননি। কষ্ট করে টাকা পয়সা দিয়ে ছোট মেয়ে খাইরুন পারভীনকে বিয়ে দিলেও স্থায়ী হয়নি তার সংসারও। এক মেয়েসহ গর্ভবতী অবস্থায় তাকে তাড়িয়ে দেয় স্বামী। প্রায় আট বছর ধরে বাবার বাড়িতে থাকে সে। খোঁজ নেয়া বা ভরণপোষণ দেয়না তার স্বামী, দেয়নি তালাকও। সবমিলিয়ে আট সদস্যের সংসার চালাতে দিশেহারা ফারুক সরদার। তাই কখনও খেয়ে, আবার কখনও না খেয়ে চলছে দিন।
কথা প্রসঙ্গে জাফর সরদার বলেন, দর্জির দোকানে কাজ করত্যাম, মোটামুটি সংসারডা চলতিছিল। বড় দুইডা বুনেক বিয়ে দিব্যের না পার্যা নিজেও বিয়ে করি নাই। কয়েক বছর আগে থেকে শরীরে সমস্যা দেখা দেয়। হাত পায়ে জোর পাইন্যা। অবশ হয়া আসে। আর ৬ মাস আগে থিকেন মাথা খালি খালি লাগে। রাতে ঘুম ধরে না। ঘুমের ওষুধেও কাজ হয় না। কোনোকিছু ভাল লাগে না।
কান্নাজড়িত কন্ঠে ফারুক সরদারের বড় মেয়ে কুলছুন খাতুন ও নার্গিস খাতুন বলেন, ভাই দেখেন রুটি ভাজতিছে মা। এই রুটি কয়েকদিন ধরে খাচ্ছি। ময়দা ফুরায়া গেলি কি খাবো শিডা কব্যের পারতিছিনা। এর আগে একবার সরকারের ১০ কেজি ত্রাণের চাইল পাইছিলেন, আর একজন এক ব্যাগ খাবার দিছিল। কিন্তু শিডা আর কয়দিন যায়। এখন আমাগরে জন্যি কিছু করেন ভাই। বাপ-ভাইয়ের চিকিৎসার জন্যি কিছু অনুদান দিলি উপকার হলোনে। কিংবা একটা ভাতা কার্ড বা একটা কাম জুগায়া দেন। না হলি তো বেশিদিন বাঁচপের পারবোনানে। হয়তো না খায়া মরা লাগবি।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরকার মোহাম্মদ রায়হান জানান, খোঁজ নিয়ে দেখছি তাদের জন্য কি করা যায়। তবে তারা আমাদের কাছে আবেদন করলে উপজেলা প্রশাসন থেকে সহায়তা দেয়া হবে।
পরিবারটির পাশে দাঁড়াতে যে কেউ সহযোগিতা পাঠাতে পারেন এই নাম্বারে ০১৭৭২-৬৩২৪৭৬ (বিকাশ, পার্সোনাল)। মোবাইল নাম্বারটি ফারুক সরদারের মেয়ে নার্গিস খাতুনের।
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | |||||
৩ | ৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ | ৯ |
১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ |
১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২ | ২৩ |
২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ | ৩০ |
আইটি সাপোর্ট ও ম্যানেজমেন্টঃ Creators IT Bangladesh