লেখাপড়ার শুরু থেকে কোনোদিন যে ছাত্রীর প্রাইভেট পড়া হয়নি, জোটেনি ভালো কোনো জামা-কাপড় বা খাবার। এবার সেই মেয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে স্বজন-প্রতিবেশী সবাইকে। তার এই ভাল ফলাফলে সবার মাঝে বইছে আনন্দের বন্যা।
মেধাবী এই শিক্ষার্থীর নাম সীমা খাতুন। চাটমোহর মহিলা ডিগ্রি কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় বাণিজ্যে বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে পাশ করে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে সে।
কিন্তু আনন্দ এখন বিষাদে পরিণত হয়েছে। কারণ দরিদ্র বাবার পক্ষে সীমার পড়াশোনার খরচ চালানো সম্ভব নয়! তাহলে কি থেমে যাবে তার লেখাপড়া? পুলিশ হওয়ার স্বপ্ন কি পূরণ হবে তার? তাই ভালো ফলাফলের পরেও সীমার চোখে অশ্রু।
উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের মন্ডলপাড়া গ্রামের দরিদ্র ভ্যান চালক ওয়াহাব প্রামানিক ও গৃহিণী কোহিনূর বেগমের মেয়ে সীমা। পড়াশোনা শেষ করে পুলিশ অফিসার হয়ে দেশের সেবা করতে ম্বপ্ন তার। তবে অনিশ্চয়তার দোলাচলে ঝুলছে সীমার পরবর্তী শিক্ষা জীবন।
কারণ বড় বোন শিখা একই সঙ্গে এইচএসসি পাশ করেছে। ছোট ভাই কাওছার দশম শ্রেণীতে পড়ে। এক সঙ্গে তিন ভাই বোনের পড়াশোনার খরচ চালানো সম্ভব নয় দুঃস্থ পরিবারটির পক্ষে। তবে মা কোহিনূর বেগমের অনুপ্রেরণা ও কলেজ শিক্ষকদের সহযোগিতায় সীমা এতদূর এসেছে সীমা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ৫ শতাংশ জায়গার ওপর টিনের চালার দু’টি ভাঙ্গাচোরা ঘর। ঘরে আসবাপত্র এক প্রকার নেই বললেই চলে। উঠোনের এক কোণে সীমার বাবা ওয়াহাব প্রামানিকের ভ্যানটি দাঁড় করানো। ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা করাতে গিয়ে এনজিওসহ নানা জায়গায় ধারদেনা করতে হয়েছে তাকে। বিক্রি করতে হয়েছে গরু-ছাগল। এখন ভ্যান চালিয়ে যা উপার্জন করেন তার মধ্যে অর্ধেকরও বেশি টাকা কিস্তি দিতে চলে যায়। সংসারে সবসময় অভাব অনটন লেগেই থাকে। ছেলে-মেয়ের এমন অনিশ্চিত ভবিষ্যত দেখে ডুকরে ডুকরে কাঁদছেন অসহায় বাবা-মা।
ওয়াহাব প্রামানিক বলেন, ‘আমি অশিক্ষিত মানুষ। আমি চেয়েছি সন্তানরা পড়ালেখা করে মানুষের সেবা করবে। সাথে পরিবারের অভাব দূর করবে। কিন্তু সংসার চালানো যেখানে দায়, সেখানে ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার খরচ যোগাড় করবো কিভাবে?’
অশ্রুসিক্ত নয়নে সীমার মা কোহিনূর বেগম বলেন, ‘মেয়েদের কৃতিত্বের কথা শুনে শুধু টাকার অভাবে মিষ্টির বদলে চিনি দিয়ে ‘মিষ্টি মুখ’ করিয়েছি। এতে খুব কষ্ট পেয়েছি। কিন্তু কি করবো আমরা নিরুপায়। দুই মেয়েকে পড়াশোনা করানোর সামর্থ্য আমাদের নেই।’ তাদের (সীমা-শিখা) স্বপ্ন পূরণে সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
চাটমোহর মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. শরীফ মাহমুদ সঞ্জু বলেন, সীমা কলেজের মধ্যে অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী। তাদের পরিবারের ব্যাপারে জানার পর আমরা কলেজ থেকে তাকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছি। তবে অদম্য মেধাবী এই শিক্ষার্থীর পড়াশোনার খরচে কেউ সহযোগিতার হাত বাড়ালে তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে।
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ||||||
২ | ৩ | ৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ |
৯ | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ |
১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২ |
২৩ | ২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ |
৩০ | ৩১ |
আইটি সাপোর্ট ও ম্যানেজমেন্টঃ Creators IT Bangladesh