পুরোনো রোগীরাই ঘুরেফিরে বারবার ভর্তি হচ্ছে মানসিক রোগের জন্য দেশের একমাত্র বিশেষায়িত পাবনা মানসিক হাসপাতালে। এসব রোগীর মধ্যে কেউ ৩ বার, আবার কেউ ১৫ বার পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন।
এর কারণ হিসেবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, কিছুটা সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফেরার পর সেখানে পরিবার থেকে মেলেনা যত্ন, পায়না ভালবাসা। পাশাপাশি নিয়মিত খায়না ওষুধ ও খাবার। ফলে আবার তারা অসুস্থ্য হয়ে পড়ে ফিরে আসে হাসপাতালে।
আর তাদের কারণে ভর্তি হতে পারে না অনেক নতুন রোগী। চিকিৎসকরা বলছেন, শুধু ওষুধ দিয়ে চিকিৎসায় রোগী সুস্থ্য হবে না। এজন্য দরকার পরিবারের যত্ন, ভালবাসা ও সুস্থ্য পরিবেশ।
আজ বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ‘পরিবর্তনশীল বিশ্বে তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য’।
পাবনা পৌর শহরের রাধানগর মহল্লার মৃত আবু তাহেরের ছেলে আব্দুল মান্নান (৪৮)। মানসিক রোগী হিসেবে পাবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন অন্তত ১৪ বার। সর্বশেষ তিনি ভর্তি হয়েছেন এ বছরের গত ২৬ জুলাই।
এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে আব্দুল মান্নান বলেন, এতবার কেন যে আমাকে ভর্তি করছে, তা আমি জানি না। মাথায় একটু সমস্যা দেখা দিলেই পরিবারের লোকজন তাকে হাসপাতালে রেখে যান। এভাবেই ১৪ বার এই হাসপাতালে ভর্তি হইছি।
শুধু আব্দুল মান্নানই নন। তার মতো এমন অনেক রোগী আছেন, যারা একেকজন অনেকবার ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে।
জানা যায়, ১৯৫৭ সালে পাবনা শহরের শীতলাই হাউজে অস্থায়ীভাবে স্থাপন করা হয় পাবনা মানসিক হাসপাতাল। এর দুই বছর পর ১৯৫৯ সালে হেমায়েতপুরে ১১১ দশমিক ২৫ একর জায়গার উপরে স্থানান্তর করা হয় হাসপাতালটি। হাসপাতালের
পরিসংখ্যান বলছে, ৫শ’ শয্যা বিশিষ্ট পাবনা মানসিক হাসপাতালে গত ৯ বছরে ভর্তি হয়েছে ১৩ হাজার ২৯৩ জন রোগী। আর কিছুটা সুস্থ্য হওয়ার পর ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে ১৩ হাজার ১৩৬ জনকে।
এ পরিসংখ্যানে বেশিরভাগ রোগী সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফেরার কথা বলা হলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। সুস্থ্য হওয়ার অনেক রোগীই বারবার ফিরছে হাসপাতালে। এদের মধ্যে কেউ ৩ বার থেকে শুরু করে ১৫ বার পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
আব্দুল মান্নানের মতো এসব রোগীরা জানেন না বারবার ভর্তি হওয়ার কারণ। তবে বাড়িতে যাওয়ার পর সমস্যা দেখা দেয় বলে হাসপাতালে ভর্তি করেন তাদের স্বজনরা। তাদের আকুতি বাড়িতে সবার সাথে থাকতে চান তারা। কিন্তু পরিবার থেকে নিয়ে যাওয়া হয় না তাদের।
এ বিষয়ে হাসপাতালে রোগী নিয়ে আসা দুইজন অভিভাবকের সাথে কথা হলে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কিছুটা সুস্থ্য হয়ে বাড়িতে নিয়ে যাবার পর কিছুদিন ভাল থাকে। দুই-এক মাস পর আবার পাগলামি শুরু করে। ফলে বাধ্য হয়ে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। তবে পরিবারে যত্ন না নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন তারা।
বারবার রোগী ফিরে আসার কারণ সম্পর্কে হাসপাতালের নার্স সুপারিন্টেন্ডেন্ট শামীম আক্তার বলেন, সম্পূর্ন ভাল হওয়া বলা যাবে না, যখন একটু সুস্থ্য হয় রোগীরা তখন তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। বাড়িতে যাবার পর তারা হয়তো ঠিকমতো ওষুধ ও খাবার খাওয়ায় না। ফলে আবার যা তাই হয়ে যায়, ওইসব রোগী কিছুদিন পর আবার হাসপাতালে ফিরে আসে। এমন অনেক রোগী আছে যারা বারবার ভর্তি হচ্ছে।
পাবনা মানসিক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সুশান্ত কুমার দাস বলেন, হাসপাতালে যে পরিবেশে মানসিক রোগীদের চিকিৎসা ও যত্ন নেয়া হয়, বাড়ি ফিরে গিয়ে সেই পরিবেশ ও পরিবারের ভালবাসা পায় না তারা। পাশপাশি ওষুধ ও খাদ্য ঠিকমতো খায়না। যে কারণে রোগীরা ঘুরেফিরে ভর্তি হচ্ছে।
‘আমাদের সবার উচিত পরিবার থেকে আর দশটা সুস্থ্য মানুষের মতো মানসিক রোগীদের আদর ভালবাসা দেয়া উচিত, যত্ন নেয়া উচিত। তাহলে দ্রুত সুস্থ্য হয়ে উঠবে মানসিক রোগীরা।
পরিসংখ্যান মতে, পাবনা মানসিক হাসপাতালের বহির্বিভাগে গত ৯ বছরে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩ লাখ ১০ হাজার ৯৫৯ জন মানসিক রোগী। এদের মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৬৫ হাজার ৩৯৩ জন এবং মহিলা ১ লাখ ৪৫ হাজার ৫৬৬ জন।
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | |||||
৩ | ৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ | ৯ |
১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ |
১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২ | ২৩ |
২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ | ৩০ |
আইটি সাপোর্ট ও ম্যানেজমেন্টঃ Creators IT Bangladesh