বাস মালিকদের ‘কুটকৌশলে’ ঈশ্বরদী-পাবনা রেলপথে নতুন একটি ট্রেন নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। চলন্ত ট্রেনে পাথর ও কাদা নিক্ষেপের কারণে চালুর মাত্র দুই মাসের মাথায় উদ্বেগজনকভাবে কমতে শুরু করেছে নতুন রেলপথের নতুন ট্রেন ‘পাবনা এক্সপ্রেস’ ট্রেনের যাত্রী।
প্রতিদিন এই ট্রেনে চলাচলরত যাত্রী এবং ট্রেনে কর্তব্যরত টিটিই-গার্ড, এটেনডেন্টসহ কর্মচারীরা পাথর ও কাদা নিক্ষেপকারীদের আক্রমনের শিকার হয়ে আহত হচ্ছেন। এই ট্রেনে পাথর ও কাদা নিক্ষেপ প্রতিদিনের ঘটনায় রূপ নিয়েছে।
রেলওয়ের বিভাগীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাস মালিক ও তাদের লোকজনের কুটকৌশলে এই ট্রেন নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন তারা। রেলওয়ে পুলিশ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গন্যমান্য ব্যাক্তি ও এলাকাবাসীদের নিয়ে রেল কর্তৃপক্ষ দফায় দফায় সভা ও সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিলেও বন্ধ হচ্ছেনা ট্রেনে পাথর ও কাদা নিক্ষেপের ঘটনা।
সম্প্রতি রেলের বিশেষ অভিযানে একজনকে আটক করা হলেও ওই পাথর নিক্ষেপকারী ছাত্র হওয়ায় মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দিয়েছে রেল পুলিশ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নতুন ট্রেন চালু হওয়ায় পাবনা থেকে রাজশাহী রুটে চলাচলরত বাসগুলোতে যাত্রী কমে যাওয়ায় পাবনার বাস মালিকরা ট্রেনের যাত্রীদের ট্রেন বিমুখ করতে ট্রেনে পাথর ও কাদা নিক্ষেপ করার জন্য লোক ভাড়া করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
রেলের একাধিক সূত্র এবং ট্রেন যাত্রীরা জানান, পাবনা এক্সপ্রেস ট্রেন চালু হওয়ায় পাবনা থেকে লোকজন এখন বাসে না গিয়ে ট্রেনে চলাচল করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন। এ কারনে পাবনা থেকে রাজশাহীতে চলাচলকারী বাসগুলোতে যাত্রী স্বল্পতাও দেখা দিয়েছে।
বাস মালিকরা রেল
লাইনের ধারে লোক লাগিয়ে ট্রেনে পাথর ও কাদা নিক্ষেপ করিয়ে ট্রেন যাত্রীদের ট্রেন বিমুখ করানোর কুটকৌশল গ্রহণ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন রেলওয়েতে কর্মরত একাধিক সূত্র।
টেবুনিয়া নতুন রেলস্টেশন সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা জামাল হোসেন জানান, কয়েকদিন আগে তাকে ২শ’ টাকা দিয়ে এক ভদ্রলোক তাকে ট্রেনে ঢিল মারতে উদ্বুদ্ধ করেন। মাত্র দু’চারটা ঢিল মারার পারিশ্রমিক হিসেবে ২শ’ টাকা পেয়ে জামাল হোসেন ট্রেনে একদিন পাথর মেরেছেন বলে স্বীকার করেন।
রেলের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা তার নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আমরা গোপনে খোঁজ-খবর নিয়ে দেখেছি পাবনার কয়েকটি বাসের মালিক ও তাদের লোকজন বিশেষ কৌশল অবলম্বন করে এই ট্রেনের যাত্রীদের হয়রানী করছেন, তাদের উদ্দেশ্য একটাই ট্রেনে না গিয়ে লোকজন যেন তাদের বাসে চলাচল করে।
বাস মালিকদের এই কুট কৌশলের শিকার হয়ে গত এক মাসে এই ট্রেনের অন্ততঃ ৫০ যাত্রী আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সূত্র। একইসাথে এই ট্রেন উদ্বোধনের পর পর এত বেশি যাত্রী ট্রেনে চলাচল করতেন যে তখন কোচ বা বগি বাড়ানোর দাবি পর্যন্ত ওঠে, ১৫ দিন আগেও যেখানে এই ট্রেনে যাত্রী হতো দ্বিগুনেরও বেশি সেখানে এখন যাত্রী সংখ্যা অর্ধেক কমে এসেছে।
চলন্ত ট্রেনে আহতদের মধ্যে দাশুড়িয়ার বেনুয়ারা বেগম জানান, চলন্ত ট্রেনে তার চোখে নোংরা কাদা ছুঁড়ে মারায় তিনি গুরুতর আহত হয়ে এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি এখনো বাম চোখে ঝাপসা দেখছেন। ঈশ্বরদীর সাঁড়াগোপালপুর এলাকার প্রত্যক্ষদর্শী ট্রেনযাত্রী নজরুল ইসলাম জানান, চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপে আহত অনেকেই আর কোনদিন এই ট্রেনে চড়বেননা বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ট্রেনে নিক্ষেপিত পাথরের আঘাতে মাথা ফেটে কয়েকদিন আগে গুরুতর আহত হন দাশুড়িয়ার ঝন্টু প্রাং-এর ছেলে সাঈদ হোসেন। একইভাবে আজমল হোসেন নামের একজন ট্রেনযাত্রীর মাথা পাথরের আঘাতে ফেটে তিনি এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন। জমেলা খাতুন নামের একজন নারী ট্রেনযাত্রীর চোখের কোনে পাথর লেগে রক্তক্ষরণ হয়ে তিনিও চিকিৎসাধীন রয়েছেন স্থানীয় একটি ক্লিনিকে। ট্রেনে দায়িত্বরতদের নিকট থেকে এসব আহতদের নাম জানা গেছে।
পাবনা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কালাম আহমেদ জানান, পাবনা থেকে নাটোর হয়ে প্রতিদিন রাজশাহীতে চলে ৩২টি বাস। পাবনায় ট্রেন চালুর কারণে সপ্তাহে দু-একদিন কোন কোন বাস যাত্রী সংকটে পড়লেও ট্রেনের বিরোধিতা আমরা কখনোই করিনি।
পাবনা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিটিই আব্দুল আলিম বিশ্বাস মিঠু জানান, পাথর ও কাদা নিক্ষেপের কারণে এই ট্রেনে ডিউটি নিতেও অনেকে অনিহা প্রকাশ করেন, ডিউটি নিলেও সন্ধ্যার পর ট্রেনে দায়িত্ব পালন করার সময় সবাই আতঙ্কে থাকেন।
রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় পরিবহণ কর্মকর্তা (ডিটিও) আব্দুল্লাহ-আল-মামুন জানান, এই ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ কারীদের আটক করতে চলন্ত ট্রেনের পেছনে পেছনে মোটর ট্রলি নিয়ে অভিযান চালিয়ে সুব্রত নামের এক পাথর নিক্ষেপকারীকে আটক করেছে রেল পুলিশ।
অভিযানে থাকা ঈশ্বরদী রেলওয়ে থানার সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) জুবায়ের হোসেন জানান, পাবনা এক্সপ্রেস ট্রেনে পাথর ও কাদা নিক্ষেপকারীদের এই অপকর্ম থেকে নিবৃত্ত করতে রেলওয়ে পুলিশ তৎপর রয়েছে।
প্রসঙ্গতঃ ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে গত ১৪ জুলাই এই ট্রেনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক নতুন এই ট্রেনে চড়ে ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করেন।
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | |||||
৩ | ৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ | ৯ |
১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ |
১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২ | ২৩ |
২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ | ৩০ |
আইটি সাপোর্ট ও ম্যানেজমেন্টঃ Creators IT Bangladesh