‘সেলিম হোসেন, বয়স ৪৬ পেরিয়েছে। দুই সন্তানের পিতা, পেশায় কাঠের ব্যবসায়ী। লেখাপড়া কিছুই জানেন না। অথচ এই বয়সে তিনি পবিত্র কোরআন শরীফ পড়তে শিখেছেন। গত বৃহস্পতিবার (১৩ ডিসেম্বর) কোরআন হাতে দেয়া অনুষ্ঠানে সেলিমের কন্ঠে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত শুনে মোহিত হয়েছেন অনেকে। আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়ায় চোখ ভিজে ওঠে উপস্থিত হাফেজ সহ সাধারণ মানুষের।’
পাবনার চাটমোহর উপজেলার মথুরাপুর উত্তরপাড়া গ্রামের সেলিমের মতো বিভিন্ন বয়সী ও বিভিন্ন পেশার অর্ধ শতাধিক মানুষ মাঝ বয়সে এসে কোরআন শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। ফলে সাড়া ফেলেছে বয়স্কদের কোরআন শিক্ষা কার্যক্রম। এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সচেতন মহল। আর এ উদ্যাগে ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশের এলাকায়।
বৃহস্পতিবার (১৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় মথুরাপুর বাজার জামে মসজিদে পবিত্র কোরআন শরীফ হাতে দেয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে পবিত্র কোরআন হাতে দেয়া হয় ৪৮ জন বয়স্ক মানুষকে। যাদের কেউ দর্জি, কেউ নাপিত, কেউবা দিনমজুর, কেউ সবজি বিক্রেতা। তাদের বয়স ৩৫ থেকে ৬০ বছর।
তাদের কোরআন শিক্ষা দিতে ধৈর্য সহকারে নিরলসভাবে পরিশ্রম করেছেন মথুরাপুর বাজার জামে মসজিদের ইমাম-খতিব এবং হোগলবাড়িয়া সিনিয়র ফাযিল মাদ্রাসার আরবী প্রভাষক হাফেজ মাওলানা মো: সাব্বির আহমাদ।
কোরআন শরীফ হাতে দেয়া অনুষ্ঠানে কোরআন শেখা ও পড়ার গুরুত্ব তুলে ধরে বক্তব্য দেন, মথুরাপুর আবু হুরাইরা কওমী মাদ্রাসা ও মনজুর রহমান এতিমখানার মুহতামীম মুফতী মফিজ উদ্দিন, মথুরাপুর বাজার জামে মসজিদের সভাপতি দেওয়ান শাহাবুর রহমান চন্দন, সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক আনিসুর রহমান, বাহাদুরপুর কওমীয়া হাফেজিয়া এতিমখানা মাদ্রাসার মুদাররিস হাফেজ মাওলানা মো: সাইদুল ইসলাম, ফরিদপুর মার্কাজ মসজিদের ইমাম মাওলানা শেখ আহাম্মদ আলী প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন ও নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন কাঠ ব্যবসায়ী সেলিম হোসেন, গাছি সুজন হোসেন, রাজমিস্ত্রি আলমগীর হোসেন। পরে মুফতী মফিজ উদ্দিন সবাইকে পবিত্র কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করানোর মাধ্যমে কোরআন হাতে দেন। এসময় বিভিন্ন মসজিদের ইমাম, হাফেজ, শিক্ষকসহ গণমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
এক প্রতিক্রিয়ায় কাঠ ব্যবসায়ী সেলিম হোসেন বলেন, গত বছর আরেক কাঠ ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম কোরআন শিক্ষা গ্রহণ করে খুব খুশি হয় এবং আমাকেও শিখতে বলেন। তার কথা শুনে এবছর আমি কোরআন শিক্ষা গ্রহণ করি। আমি কখনও ভাবি নাই যে, কোনোদিন কোরআন পড়া শিখতে পারবো। আল্লাহর অশেষ রহমত যে তিনি আমাকে কোরআন শেখার তাওফিক দিয়েছেন। এখন নামাজ পড়ে মনে তৃপ্তি পাই। আমি অন্যকে কোরআন শিখতে উদ্বুদ্ধ করবো।
মথুরাপুর বাজার জামে মসজিদের ইমাম-খতিব প্রভাষক হাফেজ মাওলানা মো: সাব্বির আহমাদ জানান, বয়স্ক মানুষকে কোরআন শরীফ পড়া শেখানো অনেক কঠিন একটি কাজ। তারপরও এলাকার মানুষগুলো খুব ভাল ও ধৈর্যশীল। তাদের আগ্রহ ও চেষ্টার কারণে কোরআন শেখানো সম্ভব হয়েছে।
তিনি জানান, গত তিন বছর ধরে তিনি বয়স্কদের কোরআন শিক্ষা দিচ্ছেন। প্রথম বছরে ১৮ জন, দ্বিতীয় বছরে ২৮ জন এবং এ বছরে ৪৮ জনকে কোরআন শেখানো হয়েছে।
মথুরাপুর আবু হুরাইরা কওমী মাদ্রাসা ও মনজুর রহমান এতিমখানার মুহতামীম মুফতী মফিজ উদ্দিন বলেন, মসজিদ কর্তৃপক্ষ ও ইমামগণ বয়স্ক মানুষদের এভাবে যদি পবিত্র কোরআন শেখানোর উদ্যোগ নেন, তাহলে কোরআনের আলো সবখানে ছড়িয়ে পড়বে। এক্ষেত্রে সমাজের সচেতন মানুষদের এগিয়ে আসতে হবে।
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | ৪ | ৫ | ৬ | |
৭ | ৮ | ৯ | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ |
১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ |
২১ | ২২ | ২৩ | ২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ |
২৮ | ২৯ | ৩০ | ৩১ |
আইটি সাপোর্ট ও ম্যানেজমেন্টঃ Creators IT Bangladesh
ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্টঃ WebNewsDesign