গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করছেন ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে গণশুনানির দ্বিতীয় দিনে মঙ্গলবার তারা এ বিরোধিতা করেন। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ সব শ্রেণির গ্রাহকের জন্য গ্যাসের দাম দ্বিগুণের বেশি করার প্রস্তাব দিয়েছে। প্রস্তাবনা অনুযায়ী, গৃহস্থালি পর্যায়ে দুই বার্নার চুলার জন্য গ্যাসের দাম ৮৫০ থেকে ১৪৪০ টাকা এবং এক বার্নার চুলার দাম ৭৫০ থেকে ১৩৫০ টাকা করার কথা বলা হয়েছে। এরপরই গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে এবং গত সোমবার গণশুনানি শুরু হয়। গ্যাসের দাম গড়ে ১০৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে সংস্থাটি। প্রস্তাবে শিল্প ও সার কারখানায় ব্যবহৃত গ্যাসের দামও বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।
নয় মাসের ব্যবধানে আবারও গ্যাসের দাম বাড়াতে এ গণশুনানি শুরু করে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন।
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পেলে উদ্যোক্তারা দেউলিয়া হয়ে যাবেন। কর্মসংস্থান হ্রাস ও বাধাগ্রস্ত হবে। কিছুদিন পরপর জ্বালানির দাম বৃদ্ধি বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করে। এতে করে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প মুখ থুবড়ে পড়বে।
গণশুনানিতে কমিশনের চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম, সদস্য মিজানুর রহমান, মাহমুদুল হক ভূঁইয়া, রহমান মুর্শেদ, আবদুল আজিজ খান উপস্থিত ছিলেন।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেছেন, আগামী এপ্রিলেও এলএনজি আসতে পারবে না। এই বিষয়টি সরকার যেমন জানে, বিইআরসিও তা বোঝে। কিন্তু তারপরও যে গ্যাস আসেইনি সে গ্যাসের ওপর ভিত্তি করে দাম বাড়ানো হচ্ছে তা অযৌক্তিক ও অন্যায়।
তিনি বলেন, জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিলে সাত হাজার ৫০০ কোটি টাকা পড়ে রয়েছে। সরকার যতদিন অর্থ না দেয় ততদিন সে তহবিল থেকে ঋণ দিয়ে এলএনজির ব্যয় নির্বাহের আহ্বান জানান তিনি। একই সঙ্গে গ্যাসের মূল্য বাড়ানোর প্রস্তাবটি বাতিলের দাবি জানান। তিনি বলেন, একবার মূল্যবৃদ্ধির ১২ মাসের মধ্যে নতুন করে মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব আইন অনুযায়ী অবৈধ।
শুনানিতে শিল্প ও বণিক সংস্থা এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, গ্যাসের দাম না বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছি। যদি আমরা এমডিজির মতো সাফল্য অর্জন করতে চাই, শিল্পে কর্মসংস্থান ছাড়া তা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এ জন্য ৭০ বিলিয়ন ডলার অর্থ প্রয়োজন। সরকার অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্ব দিচ্ছে। কিন্তু সরকারের স্বল্প মেয়াদি শিল্প উন্নয়ন নীতি অগোছালো। কিন্তু মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি উন্নয়ন নীতি বেশ ভালো।
তিনি বলেন, শুধু দাম বাড়ানোর সময় আমাদের ডাকা হবে আর বিশ্ববাজারে দাম কমলে কমানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় না, এটি ঠিক নয়। ২০১৯ সালে বিশ্বে গড় গ্যাসের দাম ছিল ৬ দশমিক ৯ ডলার। গত কয়েক বছরে মজুরি ও অন্যান্য ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে আমাদের ২৯ ভাগ ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন আবার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পেলে উদ্যোক্তারা দেউলিয়া হয়ে যাবেন। এ ছাড়া নতুন শিল্প উদ্যোক্তা তৈরি হবে না। এতে কর্মসংস্থান বাধাগ্রস্ত হবে।
বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সারাবিশ্বে তেলের দাম কমলেও বাংলাদেশে জ্বালানির দাম কমেনি। আবেদন করার পর শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো সবেমাত্র গ্যাস সংযোগ পেতে শুরু করেছে। এখন এই দাম বৃদ্ধি কার স্বার্থে করা হচ্ছে?
তিতাসের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা ৩৫ ভাগ লভ্যাংশ দিতে চাচ্ছেন কিন্তু আমরা তো দুই-তিন ভাগও ব্যবসা করতে পারছি না। তিনি গণশুনানিকে হাস্যকর আখ্যা দেন।
বিটিএমএ’র সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, গার্মেন্ট শিল্প যে ৪০ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করছে তার পেছনে আমাদের ১৭ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ রয়েছে। আপনারা বার বার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করছেন কিন্তু আমরা যে ইভিসি (ইলেকট্রিক ভলিউম কারেকটর) মিটার চাচ্ছি তা দুই থেকে তিন বছরেও দিতে পারেননি। ফলে গ্যাসের নিন্মচাপ, অপর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ, গ্যাসের প্রকৃত ব্যবহারের চেয়ে বিল বেশি দিতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ বাড়ছে। এখন আবার গ্যাসের দাম বাড়লে শিল্প প্রতিষ্ঠানের চাবি বিইআরসির কাছে দিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না আমাদের।
এদিকে শুনানিতে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি বিদ্যুতে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৩.১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯.৭৪ টাকা, সিএনজিতে ৩২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৮.১০ টাকা, প্রি-পেইড মিটারে ৯.১০ (ঘনমিটার) টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬.৪১ টাকা করার প্রস্তাব করেছে।
আবাসিকে একচুলা বর্তমান দর ৭৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৩৫০ টাকা, দুই চুলা ৮৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪৪০ টাকা, সার উৎপাদনে প্রতি ঘনমিটার ২.৭১ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮.৪৪ টাকা, ক্যাপটিভ পাওয়ারে ৯.৬২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৮.০৪ টাকা, শিল্পে ৭.৭৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৪.০৫ টাকা, বাণিজ্যিকে ১৭.০৪ টাকার পরিবর্তে ২৪.০৫ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
গ্যাসের দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গণমাধ্যমকে বলেন, গ্যাসে বড় অঙ্কের একটা ভর্তুকি দেয় সরকার। সেই ভর্তুকিটা আমরা ধীরে ধীরে কমিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। এই যে বাড়াচ্ছি তার জন্য যে আমাদের লাভ হবে তা তো না।
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | ৪ | ৫ | ৬ | |
৭ | ৮ | ৯ | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ |
১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ |
২১ | ২২ | ২৩ | ২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ |
২৮ | ২৯ | ৩০ | ৩১ |
আইটি সাপোর্ট ও ম্যানেজমেন্টঃ Creators IT Bangladesh
ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্টঃ WebNewsDesign