পাবনার চাটমোহর উপজেলার বিলচলন ইউনিয়নের বোঁথর গ্রামের দরিদ্র কৃষক ফকির জহুরুল। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া বাড়ির পাশে খলিসাগাড়ি বিলে সাড়ে তিন বিঘা জমিতে তিনি ইরি ধান লাগিয়েছিলেন।
বিল থেকে অন্য কৃষকরা যখন ধান কেটে ঘরে তুলেছেন ঠিক সেই সময় আর্থিক অসচ্ছলতা ও শ্রমিক সংকটের কারণে পাকা ধান মাঠে পড়ে নষ্ট হওয়ার উপক্রম। ঠিক তখনই দেবদূত হয়ে এগিয়ে এলেন গ্রামবাসী।
ঈদের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার স্থানীয় ইউপি সদস্য, চাকুরীজীবি, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার প্রায় ৭০ জন মানুষ সকালে ফকির জহুরুলের জমিতে নেমে পড়েন ধান কাটতে। ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে পুরো মাঠের ধান কেটে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেন তারা।
এ সময় পুরো খলিসাগাড়ি বিলে সবাই ঈদের আনন্দে মেতে ওঠে। তবে এরজন্য তিনি গ্রামবাসীকে আপ্যায়ন করেছেন। তার এমন মহানুভবতা দেখে আপ্লুত গ্রামবাসী।
সরেজমিনে মাঠে গিয়ে দেখা যায়, ধান কাটতে আসা লোকজনের জন্য রান্না করা হয়েছে ২০ কেজি চালের খিচুরি। মাঠে বসেই সবাই খিচুরি খাওয়া-দাওয়া করেন। এছাড়া চা-সিগারেট ও পানের ব্যবস্থাও ছিল সেখানে।
শুধু তাই নয়, যারা ধান কেটে দিয়েছেন এবং প্রতিবেশীসহ প্রায় দেড়শ জনকে ওই দিন রাতে সাদা ভাত, মাছ দিয়ে কচুর ঘন্ট, মুরগির মাংস, পায়েস দিয়ে আপ্যায়ন করান ফকির জহুরুল। সব কিছুতেই ছিল উৎসবের আমেজ।
বৃহস্পতিবার ঈদের আনন্দকেও ছাপিয়ে যায় সেই ধান কাটার উৎসব। জানা গেল, সাড়ে তিন বিঘা জমি থেকে সর্বসাকুল্যে ফকির জহুরুল ধান পেতে পারেন ৪০/৫০ মণ।
যে টাকা আবাদের পেছনে খরচ হয়েছে ধানের দামের যেমন অবস্থা তাতে আবাদের অর্ধেক টাকাও ঘরে তুলতে পারবেন না তিনি। এতে হতাশ ওই দরিদ্র কৃষক।
এদিকে তার আপ্যায়ন বাবদ খরচ হয়েছে প্রায় সাড়ে পনের হাজার টাকা। জমানো এবং কিছু টাকা ধার করে স্বেচ্ছায় গ্রামবাসীদের আপ্যায়ন করিয়েছেন তিনি-এমনটাই জানান ফকির জহুরুল।
ইউপি সদস্য রেজাউল করিম, সাবেক ইউপি সদস্য মোস্তফা, ঈদের ছুটিতে বাড়িতে আসা চাকুরিজীবি খাকছার হোসেনসহ সবার মুখেই ছিল একইরকম সুর। তারা বলেন, ফকির জহুরুল দরিদ্র হলেও উদার মানসিকতার মানুষ। গ্রামের সবার সাথে তার খুব ভাল সম্পর্ক। শ্রমিক সংকটে তিনি ধান কাটতে পারছেন না বিষয়টি জানার পর আমরা গ্রামবাসীরা মিলে উদ্যোগ নিয়ে ধান কেটে দেই।
তারা আরও বলেন, আমরা ওই দরিদ্র কৃষক পরিবারটির সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে এমন উদ্যোগ নিয়েছিলাম। তবে কাউকে না জানিয়ে সে বিশাল খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করা কোন মতেই ঠিক করেনি।
কৃষক ফকির জহুরুল জানান, মাঠ থেকে সবাই যখন ধান কেটে ঘরে তুলেছিলেন তখন একমাত্র আমার জমিতে ধান পেকে নষ্ট হচ্ছিল। শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটতে পারছিলাম না। গ্রামবাসীরা আমার উপকার করেছেন।
তিনি বলেন, একসময় মহাধুমধামে গ্রামবাংলায় এভাবেই ধান কাটা হতো। উৎসবের মধ্যে দিয়ে গ্রামবাসীরা মিলে গৃহস্থের ধান কেটে দিতেন। সবাই নিজেদের মধ্যে আনন্দ ভাগাভাগি করতো। কিন্তু এখন সেই প্রচলন নেই। টাকা আজ আছে কাল নেই। মানুষের ভালবাসা টাকার সাথে মেলানো যাবে না। কৃতজ্ঞতা স্বরুপ তাদের জন্য খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করেছেন বলে জানান কৃষক জহুরুল।
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | |||||
৩ | ৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ | ৯ |
১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ |
১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২ | ২৩ |
২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ | ৩০ |
আইটি সাপোর্ট ও ম্যানেজমেন্টঃ Creators IT Bangladesh