কন্যা শিশু নিয়ে সমাজে একটা সংকীর্ণতা আছে। মুখে কেউ স্বীকার করুক আর না করুক, সন্তান ছেলে হয়েছে শুনলে বাবা সহ আত্মীয়-স্বজন যতটা খুশী হয়, মেয়ে হয়েছে শুনলে ততটা হয় না।
আধুনিক যুগ বলে আগে ভাগেই সন্তানের লিঙ্গ নিশ্চিত হওয়া যায়। এদেশের ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্মী আর ডাক্তারেরাই বলতে পারবেন- সন্তান মেয়ে শুনলে, কিভাবে চোখ, মুখ কালো হয়ে যায়।
সন্তান মেয়ে হবে জন্য অনেক সময় সন্তান নষ্ট করার ঘটনাও ঘটে। এমনও সময় এদেশে ছিলো শুধুমাত্র মেয়ে সন্তান জন্ম দেয়ার কারনে তালাক পর্যন্ত হয়েছে।
কন্যা সন্তান নিয়ে লিখতে গেলে আমার মনে ভেসে ওঠে হাদিসের একটি কাহিনী- ইসলাম কবুলের পর একজন কেঁদে কেঁদে বলছে- ইয়া রাসুল আল্লাহ্, আমার গোনাহ কি মাফ হয়েছে? হুজুর বললেন- হ্যাঁ, তুমি কালেমা পড়ে ইসলাম কবুল করছো তোমার গোনাহ মাফ হয়ে গেছে। লোকটা কেঁদে কেঁদে বললো- আমি তো মারাত্বক গোনাহ করেছি।
রাসুল বললেন- কী?
লোকটা বললো- আমার একটা মেয়ে ছিলো। আমি সে মেয়েকে মারবো। আমার স্ত্রীকে বুঝতে দেই নাই, বললাম মেয়েকে বেড়াতে নিয়ে যাবো। আমার স্ত্রী তাকে সাজায়ে দিয়েছে মেয়ে বেড়াতে যাবে। মেয়েটা দৌড়ে সামনের দিকে চলে যায়, তারপর আব্বা আব্বা বলে আমার দিকে দৌড়ে এসে আমাকে জড়ায়ে ধরে।
এভাবে একসময় তাকে নিয়ে এক নির্জন পাহাড়ের কাছে গেলাম। সেখানে আমি গর্ত খোড়া শুরু করলাম, গর্তের মাটি খুড়ি আর সে মাটি ছিটে ছিটে এসে আমার দাড়িতে লাগছে, মেয়েটা আমার কাছে এসে আমার দাড়ি থেকে মাটি সড়ায়ে দেয় আর বলে- আব্বা, তোমার গায়ে তো মাটি লাগছে, তুমি এত কষ্ট করো কেন?
মেয়েটা তো বোঝে না, আমি তার জন্যই কবর খুড়ছি। কবরটা খোড়া হয়ে গেলে আমি আমার মেয়ের হাত-পা বাধা শুরু করলাম, মেয়ে বলে- আব্বা তুমি আমাকে বাধো কেন? বাধা শেষ হয়ে গেলে আমি মেয়েকে গর্তের মধ্যে ফেলে দিলাম। মেয়ে কেঁদে কেঁদে বললো- “আব্বা, তুমি আমাকে মেরো না, আমি তোমাকে সমাজে আব্বা বলে পরিচয় দিয়ে হেয় করবো না। আমাকে বাঁচতে দাও”
মেয়ের এ কথা শুনেও আমার দরদ আসলো না, আমি একটা পাথড় তুলে মেয়ের বুক লক্ষ করে ছুড়ে মারলাম। পাথড়ের আঘাতে মেয়ের বুক চিড়ে রক্ত ফিনকি দিয়ে বেড়োলো আর চিৎকার ভেসে আসলো-আববাআআআ
ইয়া রাসুল আল্লাহ, সে আওয়াজ এখনো আমার কানে বাজে।
হাদিসে এসেছে, এ কথা শুনে মহানবী(সাঃ) এর চোখের পানি দাড়ি ভিজে জামার ওপর পরছিলো।
সে সমাজ কী করে পরিবর্তন হলো? কী করে মেয়ে শিশুরা মর্যাদা পেলো? এ বিষয়ে আলোচনার দরকার আছে।
২০০০ সালে বাংলাদেশ ৩০ সেপ্টেম্বর জাতীয় কন্যা শিশু দিবস পালন শুরু করে। ২০১২ সালে জাতিসংঘ ১১ অক্টোবর আন্তর্জাতিকভাবে কন্যা শিশু দিবস পালনের ঘোষনা দেয়।
আজ ৩০ সেপ্টেম্বর, অনেকেই দিনটাকে কন্যা শিশুদিবস হিসাবে মনে করছেন। সামনের মাসে আন্তর্জাতিকভাবে কন্যা শিশু দিবস পালন হবে।
এ নিয়ে সভা হবে, সেমিনার হবে, শোভাযাত্রা বেড়োবে, পত্রিকায় কলাম লেখা হবে, ফেসবুকে স্ট্যাটাস আসবে।, কিন্তু কোথাও এ কথাটা বলা হবে না কন্যা শিশুদের মর্যাদা রক্ষা কিভাবে শুরু হলো।
৯০ শতাংশ মুসলিম দেশে মেয়ে সন্তানও ছেলের মতই সন্তান কথাটি নানা মারপ্যাচে বোঝানো হবে। কিন্তু ঘুনাক্ষরেও এ ৯০ শতাংশ মানুষের আদর্শিক নেতা মুহাম্মদ(সাঃ) এর উদাহরন টেনে বলা হবে না, তিনি নিজেও ছিলেন কন্যার পিতা।
যে নবী চিন্তা করা মাত্র আল্লাহ্ তার চাওয়া পূরন করেছেন, মুখ ফুটে বলার প্রয়োজন পরে নাই। সে নবী চাওয়া দূরের কথা একবারের জন্যও চিন্তা করেন নাই- তার একটা ছেলে সন্তান দরকার।
অথচ আজ তার উম্মত হয়ে, সন্তান মেয়ে হবে শুনলে আমাদের মুখ কালো হয়ে যায়!
সবচেয়ে বড় আপসোস, কন্যা শিশু দিবস পালন হলে সেখানে কবির কবিতা আর উপন্যাসের উদ্ধৃতি আসে কিন্তু কন্যা শিশুদের মর্যাদা দেবার অগ্রদূত হযরত মুহাম্মাদ(সাঃ) এর নাম নেয়া হয় না।
সে নাম নিলে সাম্প্রদায়িক হয়ে যায়! হাহ…
যাই হোক, কন্যা শিশু নিয়ে মুহাম্মাদ(সাঃ) এর একটি কথা দিয়েই লেখাটি শেষ করবো, তিনি বলেছেন- “তোমরা মেয়েদের গালি দিও না, কারন আমি মেয়ের পিতা”।
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | ৪ | ৫ | ৬ | |
৭ | ৮ | ৯ | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ |
১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ |
২১ | ২২ | ২৩ | ২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ |
২৮ | ২৯ | ৩০ | ৩১ |
আইটি সাপোর্ট ও ম্যানেজমেন্টঃ Creators IT Bangladesh
ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্টঃ WebNewsDesign