বাবা-মার একমাত্র সন্তান হওয়ায় খুব আদরের ছিল ফরিদ হোসেন। পড়াশোনাও চলছিল ঠিকঠাক।
আগামী বছর চাটমোহর সরকারি আরসিএন এন্ড বিএসএন পাইলট মডেল স্কুল ও কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু মৃত্যু নামক দানবের কাছে পরাজিত হতে হল ফরিদকে।
পৌর শহরের আফ্রাতপাড়া মহল্লায় শুক্রবার বিকেলে নির্মানাধীন বাড়ির সামনে নতুন সেপটিক ট্যাংক পরিস্কার করতে গিয়ে অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে দম বন্ধ হয়ে মারা যায় সে।
এদিকে একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল বাবা-মা’র। শনিবার সকালে তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন মা ফরিদা খাতুন। বিলাপ করছেন ছেলের পুরানো দিনের নানা স্মৃতি। বারে বারে জ্ঞান হারাচ্ছেন। কোন সান্তনাই খুঁজে পাচ্ছেন না প্রতিবেশীরা ।
জানা গেল, কিছুদিন আগে একমাত্র বোন ববি’র বিয়ে হওয়ায় ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েন ফরিদের বাবা বক্কার হোসেন। অভাব জেঁকে বসে সংসারে। বন্ধ হয়ে যায় তার পড়াশোনা। কিন্তু ফরিদের স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা শিখে চাকরি করে সংসারের অভাব ঘোচাবে। বাধ্য হয়ে সে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ শুরু করে,পাশাপাশি পড়াশোনা।
বাবা-ছেলে দু’জনেরই নেশা ছিল সৎ উপায়ে উপার্জন করে সংসারের অভাব ঘোচানো। তাই তারা দিনরাত পরিশ্রম করে তাদের উপার্জিত আয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি ঋশ পরিশোধ করা শুরু করেন।
ঘটনার দিন বিকেলে তখনও বাবা বক্কার হোসেন অন্যত্র কাজে মগ্ন ছিলেন। মা ফরিদা খাতুন বাড়িতে ইফতারি তৈরি করা নিয়ে ছিলেন ব্যস্ত। হটাৎ একমাত্র ছেলের মৃত্যু সংবাদ শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন তারা।
অথচ সকাল বেলা বাবা-ছেলে দু’জনেই একসাথে বসে ভাত খেয়ে বেড়িয়েছিলেন কাজের উদ্দেশ্যে। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় ফরিদ তার মাকে বলেছিল-সন্ধ্যায় এসে আবারও একসাথে ভাত খাবে তারা। এখন একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে পরিবারটিতে চলছে শোকের মাতম।
অশ্রুসিক্ত নয়নে ফরিদের বাবা বক্কার হোসেন বলেন, ‘ভাইরে আমার একমাত্র ছেলে ছিল ফরিদ। দিনমজুরি করে খেয়ে না খেয়ে অনেক কষ্টে মানুষ করেছিলাম ছেলেকে। মেয়ে বিয়ে দিতে গিয়ে ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়ি। আমার কষ্ট দেখে সেও (ফরিদ) রাজমিস্ত্রির জোগানদার হিসেবে কাজ শুরু করে। পাশপাশি রাতজেগে করতো পড়াশোনা। আমার সবস্বপ্ন শেষ হয়ে গেল।’
উল্লেখ্য, শুক্রবার বিকেলে পৌর শহরের আফ্রাতপাড়া মহল্লায় অধ্যাপিকা খালেদা আক্তারের নির্মানাধীন বাড়ির সামনে নতুন সেপটিক ট্যাংক পরিস্কার করতে গিয়ে মারা যান ফরিদ হোসেন।
আর এ ঘটনায় আহত ঈসা আহমেদ নামে অপর এক নির্মাণ শ্রমিক। তাকে গুরুতর আহতাবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহত ফরিদ ভাদড়া গ্রামের বক্কার হোসেনের ছেলে, আহত ঈসা পৌর শহরের নারিকেল পাড়া মহল্লার মৃত কালু খাঁ’র ছেলে।
পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘন্টাখানেকের চেষ্টায় দু’জনকে উদ্ধার করে।
এদিকে পরিবারের কোন অভিযোগ না থাকায় শুক্রবার রাতেই স্বজনদের কাছে ফরিদের মরদেহ হস্তান্তর করে পুলিশ। শনিবার সকালে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয় ফরিদের।
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ||||||
২ | ৩ | ৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ |
৯ | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ |
১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২ |
২৩ | ২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ |
৩০ | ৩১ |
আইটি সাপোর্ট ও ম্যানেজমেন্টঃ Creators IT Bangladesh
ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্টঃ WebNewsDesign