‘মেধাবী ছেলের দু’টি কিডনী-ই নষ্ট হয়ে গেছে। চিকিৎসায় খরচ হয়ে গেছে ২৮ লাখ টাকা, আর কিছু নেই। কি করবেন ভেবে পান না বাবা। রাতে ঘুম হয় না তার। তবে কি সময়ের আগেই শেষ হয়ে যাবে সব স্বপ্ন। বাবা হয়ে কিভাবে সইবেন সেই কষ্ট। তাই কঠিন সিদ্ধান্তটা নিলেন বাবা। অসুস্থ্য ছেলের ভবিষ্যত আর শিক্ষাজীবনের কথা ভেবে বৃদ্ধ বয়সে নিজের একটি কিডনী দিয়ে দিলেন সন্তানকে।’
বলছি এক সাহসী বাবা মো. মোশারফ হোসেনের গল্প। বর্তমান যুগে অবিশ্বাস্য হলেও সত্য এমন ঘটনা ঘটেছে পাবনার চাটমোহরে। ঢাকার মিরপুরে কিডনী ফাউন্ডেশন হাসপাতালে তাদের কিডনী প্রতিস্থাপন করেন ডা. হারুন অর রশিদ।
স্কুল শিক্ষক বাবা মোশারফ হোসেনের স্বপ্ন ছিল তার ছেলে আল ইমরানকে টেক্সটাইল প্রকৌশলী হিসেবে গড়ে তোলার। ২০১৫ সালে ১০তম ব্যাচে পাবনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হন আল ইমরান। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, তার দু’টি কিডনী অকেজো হয়ে পড়ায় হতাশ করে তোলে তাকে। কলেজে ভর্তির সাত মাস পর বিছানায় শয্যাশায়ী হতে হয় ইমরানকে।
সম্পত্তি বিক্রি করে, পরিবারের সঞ্চয় মিলিয়ে প্রায় ২৮ লাখ টাকা খরচ করে স্কুলশিক্ষক বাবা সন্তানকে যথাযথ চিকিৎসা দেয়ার জন্য রীতিমতো সংগ্রাম করেন। কিন্তু আল ইমরানের দরকার কিডনী প্রতিস্থাপন করা। কুল কিনারা না পেয়ে অবশেষে ৬০ বছর বয়সী বাবা মোশারফ হোসেন ছেলেকে নিজের কিডনী দান করার সিদ্ধান্ত নেন।
গত বুধবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ঢাকার মিরপুরে কিডনী ফাউন্ডেশন হাসপাতালে বাবার দেহ থেকে ছেলের দেহে একটি কিডনী প্রতিস্থাপন সফলভাবে সম্পন্ন করেন চিকিৎসকরা। বাবা ও ছেলে উভয়েই বর্তমানে ভাল আছেন। পারিবারিক সুত্র জানায়, কিডনী ফাউন্ডেশনে ডা. হারুন অর রশিদের তত্ত্বাবধায়নে তাদের চিকিৎসা চলছে।
পাবনার চাটমোহর উপজেলার খৈরাশ গ্রামের আল ইমরান দীর্ঘদিন ধরে কিডনী রোগে ভুগছিলেন। ২০১৫ সালে পাবনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হওয়ার পর তার দু’টি কিডনী ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তার বাবা মোশারফ হোসেন নাটোরের চান্দাই উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
এ বিষয়ে অসুস্থ্য আল ইমরানের ভাই আল কায়েস জানান, আমাদের পরিবারের সদস্যদের এই সিদ্ধান্ত নেয়াটা খুবই কঠিন একটি কাজ ছিল। বাবা ইমরানের জন্য কিডনী দান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিডনী দেয়ার জন্য তিনি সাহসীও ছিলেন। পরে পরিবারের সব সদস্য তাকে সমর্থন করেন।
আল ইমরানের সহপাঠি ও তৃতীয় বর্ষের ছাত্র নাজমুল ইসলাম বলেন, ইমরান একজন খুবই মেধাবী ছাত্র। সে সবসময় ভাল ফলাফল করার স্বপ্ন দেখতো। কিন্তু ভাগ্য তার সে স্বপ্নের যাত্রা থামিয়ে দিয়েছে। তারপরও সে আশা ছাড়ে নাই। পড়শোনা পুনরুদ্ধার করতে আশাবাদী হয়ে সে শ্রেণীকক্ষে ফিরে আসবে বলে মনে করি।
পাবনা ট্রেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সকল শিক্ষার্থী অসুস্থ্য সহপাঠি আমাদের বড় ভাই ইমরানের চিকিৎসায় আর্থিকভাবে অনেকখানি অবদান রেখেছে বলেও জানান নাজমুল।
বৃদ্ধ বয়সে জীবনের ঝুঁকি উপেক্ষা করে অসুস্থ্য ছেলের ভবিষ্যত চিন্তা করে নিজের কিডনী দান করেছেন সাহসী শিক্ষক পিতা মোশারফ হোসেন। তাই তাকে সালাম ও সাধুবাদ জানিয়েছেন পাবনা ট্রেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থী।
আল ইমরানের ভাই আল কায়েস জানান, এমন বাবা পেয়ে এবং তার মতো মানুষের সন্তান হতে পেরে আমরা নিজেদের গর্বিত মনে করছি। আশা করি, আমার ভাই দ্রুত সুস্থ্য হয়ে তার শিক্ষাজীবনের ডিগ্রি শেষ করবে এবং আমাদের বাবা শীঘ্রই তার স্কুলে ফিরে যাবেন।
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | ৪ | ৫ | ৬ | |
৭ | ৮ | ৯ | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ |
১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ |
২১ | ২২ | ২৩ | ২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ |
২৮ | ২৯ | ৩০ | ৩১ |
আইটি সাপোর্ট ও ম্যানেজমেন্টঃ Creators IT Bangladesh
ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্টঃ WebNewsDesign