বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি নাম আনিসুল হক বরুণ। তিনি থিয়েটারের সাথে জড়িত ১৯৮৭ সাল থেকে। কারক নাট্য সম্প্রদায়ের পথ নাটক ‘টিয়াপাখির সমাচার’ দিয়ে হাতেখড়ি। তারপর অনুশীলন আশি, নাগরিক নাট্য সম্প্রদায় এবং সেন্টার ফর এশিয়ান থিয়েটার হয়ে বর্তমানে কাজ করছেন নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে।
এছাড়া ২০০৭ সালে সালাহউদ্দিন লাভলুর ‘সাকিন সারিসুরি’ নামক মেগা সিরিয়ালের মধ্য দিয়ে তিনি নিয়মিত মূলধারার অভিনয় শুরু করেন। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি’র সঙ্গে যুক্ত হয়ে মিরপুর জল্লাদখানায় নির্দেশনা করেছেন ‘যুদ্ধপুরাণ’ নামে মুক্তিযুদ্ধের গণহত্যা বিষয়ক পরিবেশ থিয়েটার। গত ত্রিশ বছরে দেশের অসংখ্য উল্লেখযোগ্য থিয়েটারের পাশাপাশি কাজ করেছেন মিশর, সুইডেনের মত বিভিন্ন দেশে।
তাঁর ভালোলাগা- ভালোবাসা থিয়েটার, অভিনয়, কবিতা, স্থির ও চলমান চিত্র। কর্মরত আছেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের অডিও ভিজ্যুয়াল আর্কাইভ এবং ডকুমেন্টেশন বিভাগের প্রধান হিসেবে।
চিত্রকলাকে স্থিরচিত্রের ফ্রেমে ধরার প্রত্যাশায় গত ২৪ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে তাঁর একক ভিন্নধর্মী আলোক চিত্রকলা প্রশর্শনী।
ঢা.বি.’র চারুকলা ইনস্টিটিউটের জয়নুল গ্যালরীতে তার ৩৭টি ছবি নিয়ে অন্তর্দর্শন নামে ভিন্নধর্মী এই প্রদর্শনীকে সামনে রেখে আনিসুল হক বরুণ বলেন, জেলা শহরে জন্ম হওয়ার কারণে আশেপাশে দিগন্তবিস্তৃত মাঠ না থাকলেও খেলার মাঠের খুব একটা অভাব ছিল না। আর অভাব ছিল না মাথার ওপর অনন্ত আকাশে গতিশীল মেঘেদের অবিরাম ভেসে চলা।
মেঘ দেখেই কাটিয়ে দিয়েছি ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন। মেঘেদের ছুটে চলার মুহূর্তে তাদের আকার, আকৃতি এবং প্রকৃতির যে পরিবর্তন তা মুগ্ধ করে রেখেছে আমাকে। কখনও দেখেছি একপাল হরিণ ছুটে চলেছে মেঘেদের মধ্যে, কখনও নদী বয়ে চলেছে দিগন্ত ভেদ করে, সমুদ্রে ভেসে চলেছে কলম্বাসের জাহাজ অথবা দিগন্তবিস্তৃত মাঠে ধুলো উড়িয়ে ছুটে চলেছে ডালিমকুমার।
মেঘ দেখার লোভ এতটাই গ্রাস করেছিল আমাদের যে, খেলতে খেলতে ক্লান্ত হয়ে গেলে খেলার মাঠে শুয়ে শুয়ে আকাশ দেখতাম বন্ধুরা মিলে এবং মেঘেদের এক একটা অস্তিত্বকে নিজেদের ভেবে নিয়ে টিকে থাকার খেলায় মেতেছি বহুদিন।
থিয়েটারে কাজ করতে এসে আমার বারবারই মনে হতে লাগল থিয়েটারের সঙ্গে চিত্রকলার একটা গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এই বিশ্বাস আস্থায় পৌঁছে গিয়েছিল থিয়েটারের গুরুদের এক বিশেষ মন্ত্রে।
তা হলো -Theatre is a composite art that is forever evolving in new forms.
সে সময় থেকেই থিয়েটারে চিত্রকলার সংযুক্তি খুঁজে বেরিয়েছি। বিভিন্ন লাইব্রেরি ঘুরে শুধু থিয়েটারের বই-ই নয়, চিত্রকলা বিষয়ক বই-ও পড়েছি, দেখেছি জগৎখ্যাত চিত্রশিল্পীদের চিত্রকর্ম ও জীবনী। তাঁদের ছবিতে আলোর যে বিশ্লেষণ, নাটকীয়তা এবং নাটকীয়তার যে গতি তার প্রতি আজন্মের দুর্বলতা অনুভব করি মননে।
পাবলো পিকাসোর ছবি আঁকার ধরনকে ভিত্তি করে নির্মিত কিছু ফিল্ম দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। সেখানে দেখেছি তাঁর আঁকার গতি-প্রকৃতি এবং বিষয়বস্তু ক্রমবর্ধমান পরিবর্তনশীলতায় ভাসতে ভাসতে কোথা থেকে কোথায় চলে যায় – এ যেন ছোটবেলায় দেখা ওই মেঘেদের ভেসে ভেসে রেখে যাওয়া স্মৃতিময় নাটকের অনুভুতি, যা আবার জেগে উঠেছিল আমার মধ্যে।
মনে হয়েছিল, স্বতঃসিদ্ধ নয়, স্বতঃস্ফূর্ত ও সহজাত উন্মোচনের আকাঙ্ক্ষাই শিল্পের গতি। আর তখন থেকেই থিয়েটারের মধ্যে চিত্রকলার উপস্থিতি এবং বিষয়বস্তুর ক্রমবর্ধমান পরিবর্তনশীলতার স্বতঃস্ফূর্ত গতি নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছি, অন্তত যে কাজগুলো আমার নির্দেশনায় হয়েছে।
জীবনযাপন, শিক্ষা-দীক্ষা এবং শিল্পচর্চার যে ক্ষেত্রে আমার বিচরণ তার সঙ্গে চিত্রকলার পরোক্ষ যোগাযোগ থাকলেও প্রত্যক্ষ সম্পর্ক ছিল না। কিন্তু দুর্বলতা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। অভিনয়শিল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে চলমানচিত্রের সঙ্গে একধরনের গভীর যোগাযোগ বা চর্চা রয়েছে দীর্ঘদিনের।
স্থিরচিত্রের প্রতি যে আগ্রহ তা চিত্রকলা থেকে কম সময়ের হলেও এই দুইয়ের প্রতি সহজাত যে টান তা প্রায় একই মাত্রায় প্রকাশিত হয়। তাই ভাবনা হলো যদি চিত্রকলাকে স্থিরচিত্রের ফ্রেমে ধরা যায় তাহলে কেমন হয়! এই সময় আমার কিছু চিত্রকলা ও স্থিরচিত্রের চর্চাকারী বন্ধুদের উৎসাহ আমাকে উচ্ছ্বসিত করে।
সেই উচ্ছ্বাসেই, দুইটি কলা চর্চার ধারাকে একই সুরে গাঁথার মধ্য দিয়ে নিজের শৈল্পিক দুর্বলতাকে প্রশ্রয়ের মাধ্যমে আশ্রয় দেবার চেষ্টাই আমার এই আলোক-চিত্রকলা বা Photo Arts। কেননা আমার মনে হয়, শিল্প হচ্ছে শিল্পীর পূর্বাভিজ্ঞতাতীত অভিজ্ঞতা দানকারী বিশেষ অনুভব বা আচরণ।
কার বা কিসের ছবি ধারণ করছি, এ বিষয়ে এটুকুই বলতে পারি, সময় যেসব পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আবর্তিত হতে হতে নিজেকেই বারবার অতীত বলে প্রমাণ করছে, সেসব নানাবিধ পরিবর্তনের মধ্যে যা কিছু দৃশ্যমান, সেইসব দৃশ্যমান পরিবর্তনের ধারায় বস্তু এবং বৃক্ষরাজির মধ্যে যেসব আকার এবং আকৃতিগত পরিবর্তন, যা স্বতঃস্ফূর্ত গতিতে চলেছে, সেইসব পরিবর্তনের কোনো না কোনো এক ক্ষুদ্রতম অংশের কোনো এক মুহূর্তের ছবি ধারণের প্রচেষ্টা, যা পরমুহূর্তেই পরিবর্তিত হয়ে মহাকালে মিলিয়ে যাচ্ছে।
আমার বলতে ভালো লাগছে, ক্যামেরায় ছবি ধারণের চেষ্টা করছি না বরং ছবি আঁকার চেষ্টা করছি। আমি কখনোই প্রকৃতির সহজাত গতিধারাকে কোনো প্রকারের সংযোজন-বিয়োজন করে ছবি তৈরি করছি না। বরং প্রকৃতির সহজাত সৌন্দর্যকেই ধরার চেষ্টা করছি।
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ||||||
২ | ৩ | ৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ |
৯ | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ |
১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২ |
২৩ | ২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ |
৩০ | ৩১ |
আইটি সাপোর্ট ও ম্যানেজমেন্টঃ Creators IT Bangladesh