বলা হয় সঙ্গীত জগতের ওস্তাদ বা পন্ডিত। আজ থেকে একশ’ বছর আগে যার সুরে মাতোয়ারা হয়েছিল সঙ্গীত প্রেমিকরা।
তিনি ছিলেন একজন বাংলাদেশী সঙ্গীত-অধ্যক্ষ, রাগসঙ্গীত বিশারদ ও উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতশিল্পী। তিনি আগ্রা ও রঙ্গিলা ঘরানার যোগ্য উত্তরসাধক।
বারীন মজুমদারের জন্ম শতবার্ষিকী শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারি)। প্রখ্যাত এই সুর সাধক ১৯১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পাবনার রাধানগরে জন্মগ্রহণ করেন। ২০০১ সালে তিনি মারা যান।
বারীন মজুমদারের জন্মভিটা এখন ভূমিগ্রাসীদের দখলে। অযত্ন-অবহেলায় ধ্বংস হতে চলেছে তার সব স্মৃতিচিহ্ন।
ওস্তাদ বারীন মজুমদার পাবনা পৌর এলাকায় রাধানগর মজুমদার পাড়ায় প্রখ্যাত জমিদার বংশের সন্তান। বাবা জমিদার নীশেন্দ্রনাথ মজুমদার শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ভক্ত ছিলেন। দেশ-বিদেশের প্রখ্যাত শিল্পীদের নিয়ে নিজ বাড়িতে নিয়মিত আসর বসাতেন।
সেখানে নীশেন্দ্রনাথ অভিনয় করতেন, বারীনের মা মণিমালা মজুমদার বাজাতেন সেতার। সেখান থেকেই সঙ্গীতের প্রতি আসক্তি তার। চর্চায় বাদ সাধেনি পরিবারও। ১৯৩৯ সালে ভারতের লক্ষৌর মরিস কলেজ থেকে সঙ্গীতে উচ্চশিক্ষা নেন বারীন।
দেশভাগের সময় ১৯৪৭ সালে ফিরে আসেন বাংলাদেশে। জমিদারি ফেলে মন-প্রাণ সপে দেন শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে। তার প্রচেষ্টাতেই ১৯৬৩ সালে ঢাকার কাকরাইলে প্রতিষ্ঠিত হয় দেশের প্রথম সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়।
ওস্তাদ বারীন মজুমদার তালিম দিয়েছেন বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতেও। সঙ্গীত সাধনায় তার খ্যাতি ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ে পুরো উপমহাদেশে। অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পাকিস্তান আমলেই পেয়েছেন ‘তমঘায়ে ইমতিয়াজ’ খেতাব।
স্বাধীন বাংলাদেশে এরপর ১৯৮৩ সালে একুশে পদক, ২০০২ সাল মরণোত্তর স্বাধীনতা পদকসহ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
স্ত্রী ইলা মিত্রের সাথে ওস্তাদ বারীন মজুমদার
পাবনার খ্যাতিমান সঙ্গীত শিল্পী প্রলয় চাকী জানান, বেদখলে থাকা রাধানগরের পুকুর ঘাটের জমিদার বাড়িতে বারীন আসলে, আশেপাশের জেলা থেকে গুণী শিল্পী ও যন্ত্রীরা ছুটে আসতেন। আমাদের সুযোগ হয়েছে তাদের আসরে গান শোনার।
তিনি জানান, মজুমদার পরিবারের দান করা জমিতেই গড়ে উঠেছে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ, রাধানগর মজুমদার একাডেমিসহ নানা স্থাপনা। কিন্তু, জমিদারির বিশাল সম্পত্তি তার জীবদ্দশাতেই বেহাত হতে থাকে। লজ্জা-অভিমানে তিনি প্রতিবাদটুকু করেননি তিনি। এক সময় মাথাগোঁজার শেষ আশ্রয়টুকুও ভূমিখেকোরা দখলে নেন। এজন্য মৃত্যুর আগে তিনি আর কখনও পাবনায় আসেননি।
বারীন মজুমদারের বড় ছেলে সঙ্গীত পরিচালক পার্থ সারথি মজুমদার জানান, পাবনায় তাদের পূর্বপুরুষের বাড়ি। জমিদার পরিবারের ১ হাজার ২৩৭ শতাংশ জমি জাল দলিল করে দখলে নিয়েছে একটি চক্র। বাবা যাদের তার কাছে আশ্রয় দিয়েছেন, তারাই এই প্রতারণা করেছেন।
বারীন মজুমদারের ছোট ছেলে জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী বাপ্পা মজুমদার বলেন, ‘নিজেদের বাড়ি, পূর্বপুরুষের জমিতে আমরা দু’দন্ড দাঁড়াতে পারি না, এর চেয়ে বেদনাদায়ক আর কি হতে পারে!’ তিনি বলেন, ‘আইনি লড়াইয়ে বাবার সঙ্গে প্রতারণার বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু, অবৈধ দখলদাররা আমাদের সম্পত্তি ফিরিয়ে দিচ্ছেন না।’
এ বিষয়ে পাবনা জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘পন্ডিত বারীন মজুমদারের সম্পত্তি তার উত্তরসূরিদের ফিরিয়ে দিতে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।’ এ ছাড়া তার স্মৃতি ধরে রাখতে যে কোনো উদ্যোগে সরকারি সহযোগিতারও আশ্বাস দেন তিনি।
পাবনার জ্যেষ্ঠ আইনজীবী পুলক কুমার চক্রবর্তী জানান, ১৯৭৮ সালে মৃত কমলা রানী মজুমদারকে জীবিত দেখিয়ে ২০০৫ সালে শোলে সূত্রে ডিক্রি করে বারীন মজুমদারের সম্পত্তি নিজেদের করে নিতে চেষ্টা করে একটি চক্র। পাবনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এই জালিয়াতির প্রমাণ পেয়ে এ সম্পত্তি বারীন মজুমদারের উত্তরাধিকারীদের বলে রায় দিয়েছেন। আইনি বাধা না থাকলেও অবৈধ দখলদাররা এ সম্পত্তি এখন পর্যন্ত ছাড়েননি বলে জানান তিনি।
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ||||||
২ | ৩ | ৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ |
৯ | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ |
১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২ |
২৩ | ২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ |
৩০ | ৩১ |
আইটি সাপোর্ট ও ম্যানেজমেন্টঃ Creators IT Bangladesh
ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্টঃ WebNewsDesign